বোস্টন (ম্যাসাচুসেটস) থেকে: যুক্তরাষ্ট্রে এবারের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে জেতাতে মুসলিম কমিউনিটি বড় ভূমিকা রেখে চলেছে। এই লক্ষ্যে সব ধরনের প্রচেষ্টা আর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে কমিউনিটিতে।
রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম-বিদ্বেষী আচরণ ও কথা-বার্তার কারণেই এবারের নির্বাচনে, বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর পরিচয়কে সামনে এনে এই প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলানিউজের কথা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা হুমায়ুন মোর্শেদের সঙ্গে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মূল ধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করছেন হুমায়ুন। তিনি জানান, তারা মনে করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে মুসলমানরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আর সে কারণেই মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে।
বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকেই এই বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রচারাভিযানের পক্ষে।
হুমায়ুন মোর্শেদ জানান, বোস্টনের ক্যামব্রিজে এ নিয়ে তাদের বিশেষ র্যালি রয়েছে।
একই ধরনের র্যালি আয়োজনের খবর জানা গেছে নিউইয়র্কেও। আগামী ৩০ অক্টোবর রোববার দুপুরে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় এই র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। নিউইয়র্কে বসবাসরত মুসলিম-আমেরিকানরা এতে অংশ নেবেন। বাংলাদেশি মুসলিম-আমেরিকানরাও এতে অংশ নিচ্ছেন।
‘মুসলিম-আমেরিকান ফর হিলারি ক্লিনটন-২০১৬’ নামে একটি বিশেষ গ্রুপ এই র্যালির আয়োজন করেছে। গ্রুপটির জাতীয় কমিটির নির্বাহী পরিচালক এবং মুসলিম কমিউনিটির পরিচিত মুখ ও আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদার এ র্যালি আয়োজন প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণ জরিপগুলো দেখাচ্ছে নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে হিলারিই এগিয়ে রয়েছেন। তবে তা দেখে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। নির্বাচনে ভোট দিতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
হিলারির পক্ষে প্রচারণায় আরও একটি গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে, যার নাম মুসলিম ডেমোক্র্যাটস। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো থেকে পরিচালিত এই গ্রুপটির পক্ষ থেকে বর্তমানে জোর প্রচারণা চালানো হচ্ছে, মুসলমানরা যেন আগাম ভোটে অংশ নিয়ে তাদের ভোট কাস্ট করে ফেলেন। এবারের নির্বচনকে জটিল ও অনিশ্চয়তায় ভরা উল্লেখ করে শেষ মুহূর্তের ঝামেলা এড়াতে মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন এই গ্রুপটির নেতারা।
পাঁচটি কারণকে সামনে এনে তারা বলছেন কেন আগাম ভোট দিতে হবে। কমিউনিটির নেতা ড. জহির সাহলুল বলেন, এতে সময় বাঁচে, ভোটের দিন লম্বা লাইনে অপেক্ষা করতে হবে না। এবারের নির্বাচনে ব্যাপকসংখ্যক ভোটার কেন্দ্রে আসবেন, এই সম্ভাবনা থাকায় এর প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়ে গেছে। ড. জহির বলেন, ভোটের দিন আপনার ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে, কর্মক্ষেত্রে কোনো ঝামেলা হয়ে যেতে পারে, ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে, এসব কারণও এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
মুসলমানদের ভোটের দিনে স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, নিজের ভোটটি দেওয়া হয়ে গেলে নির্বাচনের দিন অন্যদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার কাজ করার সুযোগটিও থাকে। এতে কারো ভোট না দেওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।
বোস্টনের মুসলিম কমিউনিটির নেতা হুমায়ুন মোর্শেদও বাংলানিউজকে তাদের একই ধরনের আহ্বানের কথা বলেন। তিনি জানান, ফোন ব্যাংকিং করে, টেলিফোন করে তারা ভোটাদের উদ্বুদ্ধ করার কাজগুলো চালিয়ে যাচ্ছেন। বোস্টন নগরে ১০ হাজারের মতো বাংলাদেশি কমিউনিটি সদস্য রয়েছেন, যাদের নিবন্ধিত করানো, আগাম ভোটে উদ্বুদ্ধ করা আর সর্বোপরি ভোটের দিন কেন্দ্রে হাজির হয়ে ভোট দিতে উৎসাহিত করার কাজগুলো চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এ বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি নির্বাচনের স্বেচ্ছাসেবী হচ্ছেন বলেও জানান হুমায়ুন মোর্শেদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
এইচএ/এমএমকে